আজ

দাসত্ব যুগে যুগে



এমরান হোসেন রাসেল©

জাতিসংঘের ২০০৫ সালে এক রিপোর্ট বলছে২০০৫ সালে পৃথিবীতে প্রায় দুই কোটি সত্তুর লক্ষ দাস ছিল।  ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টি ফেললে দেখা যায় ৪০০ বছরে আগে আমেরিকায় সে পরিমাণ মানুষকে দাসত্ব বরণ করতে হয়েছিল, ২০০৫ সালে দাসেরা সংখ্যায় দ্বিগুণ এরপর ছোট-বড় কয়েকটি যুদ্ধ এই পরিমাণকে বৃদ্ধি করা ছাড়া, কমায় নি।


১৯০১ সালে সুইজারল্যান্ডের পণ্ডিত Gustave Jéquier ইরানের খুজেস্তান প্রদেশের এলামিদের প্রাচীন রাজধানী সুসা নামক স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজে ব্যাবিলনিয় রাজবংশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কার করেন। মোট ১২টি পাথরের টুকরোয় খোদাই করে লেখা ২৮২টি আইনের এই সংকলন পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন লিখিত আইন সংকলন, যা হামিউরাবি’র কোড নামে পরিচিত। প্রথম ব্যাবিলনিয় রাজবংশের ষষ্ঠ রাজা হামিউরাবি (১৮১০-১৭৫০ খৃস্টপূর্ব) সময়কালের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত আক্কাদিয় ভাষায় কিউনিফর্ম লিপিতে লেখা এই আইনগুলো ১৯০৪ সালে ফরাসি পণ্ডিত Jean-Vincent Scheil (য্য ভনশন স্যেই) পাঠোদ্ধার করেন। বর্তমানে প্যারিসের লুভ্র্‌ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে এই অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো। যাক সেকথা! এতকিছু বলার উদ্দেশ্য তো আছেই। ৩৬০০ লাইনের ২৫০টি আর্টিকেলের এই প্রস্তরখণ্ডগুলোই এখন পর্যন্ত দাস ইতিহাসের সর্বপ্রাচীন লিখিত তথ্যহামিউরাবি’র কোডে তৎকালীন ব্যবিলনিয় সমাজে তিনপ্রকার মানুষের বর্ণনা পাওয়া যায়। “(১) সম্পত্তির মালিক (awīlum), (২) গরীব কিন্তু মুক্ত (muškēnum) আর (৩) দাস [পুরুষ দাস (wardum) এবং স্ত্রী দাস (amtum) সেইসব আইনের অন্য অনেক ধারার মধ্যে ১৫ নম্বর ধারায় দাসদের পালিয়ে যাওয়ায় সাহায্যকারীর মৃত্যু ঘোষণা করা হয়েছে এবং ১৯৯ নম্বর ধারায় উল্লেখ, যেকোন ক্ষতিপূরণে দাসেরা অন্যান্য সাধারণদের প্রাপ্যের তুলনায় অর্ধেক পাবে।

প্রাচীন মিশরেও দাসপ্রথা ছিল জানা যায়, যদিও এর ব্যাপকতা আর বিস্তার সম্পর্কে অস্পষ্টতা রয়েছে। বিভিন্নভাবে মানুষ দাসত্বের সাথে জড়িত হতো। ঋণ শোধ দিতে গিয়ে, অপরাধের শাস্তি হিসেবে, যুদ্ধবন্দী হিসেবে, সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করতে স্বেচ্ছায়, বংশগতভাবে বা গ্রেপ্তার হয়ে প্রাচীন মিশরে মানুষকে দাসত্ব গ্রহণ করতে দেখা যায় প্রাচীন মিশরের প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা যায়,  একজন সিরিয়ান মেয়ে দাসীর জন্য সেই সময় ৪ ডিবেন (১ Deben = ৯০ গ্রাম) এবং ১ কিট (১ kit = ৯ গ্রাম) অর্থাৎ ৩৭০ গ্রাম রূপা খরচ করতে হতো। আর একজন দাসের জন্য ২ ডিবেন বা ২০ কিট খরচ করতে হতো। ফারাও সম্রাট তৃতীয় আমেনহোতেপ (Amenhotep III) গেজারের রাজপুত্র মিল্কিলুকে (Milkilu) তুরস্কে বানিজ্যে পাঠিয়ে আদেশপত্রে অনেক মূল্যবান জিনিসের সাথে, চল্লিশ জন দাসী সংগ্রহের কথা এবং দাসী প্রতি তিনি ৪০ কিট বা ৪ ডিবেন খরচ করতে বলেছেন। প্রাচীন মিশরিয়রা দাস ব্যতীত নারী-পুরুষ সমাজের সকল স্তরের মানুষকে আইনের দৃষ্টিতে সমান বিবেচনা করত। মিশরে দাসেরা ছিল শর্তাবদ্ধ কাজের লোকের মত, অর্থাৎ তারা নির্দিষ্ট সময় কাজ করে নিজেদের মুক্তি অর্জন করে নিতে পারত। একইসাথে দাসের বেচাকেনা করতে পারত, বৈদ্য দ্বারা চিকিৎসা করাতে পারত দাসেরা দো’ভাষী হিসেবেও কাজ করত পরাজিত সক্ষম শত্রুসৈন্যদেরকে দাস হিসেবে  মিশরীয়রা বেশি পছন্দ করত। সাধারণত এসব দাসদের মাঠের কাজে নিয়োগ দেওয়া হতো। মিশর সভ্যতায় আশেপাশের দেশের দাস-বাজার থেকে দাস সংগ্রহের বিষয়টি জানা যায়। মিশরের ফারাও রাজাদের পাশের তুরস্ক আর সিরিয়ার মেয়েদের দাসী হিসেবে পছন্দের কথাও জানা যায়।

ব্রোঞ্জযুগের অবসানের পর মানুষ লৌহযুগে প্রবেশ করলে লৌহ হাতিয়ার আর্শীবাদরূপে আর্বিভাব হলো। আদিম মানুষ যত আধুনিক হতে লাগলো, সমাজে তত শ্রেণিভেদ আর শ্রমবিভাগ সৃষ্টি হতে লাগলো। উদ্বৃত্ত শস্য বহুপরিমাণে বেড়ে গেল, নতুন নতুন পণ্য বাজারে বিস্তৃতি লাভ করল, মুদ্রা প্রচলন ব্যাপকতর হলো। সমাজে অভিজাত ভূস্বামী, স্বাধীন কারিগর আর দাসদের সাথে নতুন একটি শ্রেণির আর্বিভাব ঘটল, বনিকশ্রেণিএই নতুন পণ্যসভ্যতা গ্রীকের নতুন উপনিবেশ আয়োনিয়ায় গোড়াপত্তন করল। আয়োনিয়ার সাথে পাশের রাষ্ট্রগুলোর পূর্ব থেকেই প্রত্যক্ষ এবং ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। এই অর্থনৈতিক সম্পর্ক আয়োনিয়ানদের সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ করে। দাস শ্রমের উপর নির্ভরশীল আয়োনিয়ান সমাজে একটি অন্তর্দ্বন্দ্ব আস্তে আস্তে প্রকট হয়ে দেখা দিল। শ্রেণি-সংঘাত স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দেখা দিল। হিরাক্লিটাস একজন সক্রেটিস-পূর্ব গ্রিক দার্শনিক, আইয়োনিয়ার বাসিন্দা। ডায়োজিনেসের এর মতামতের উপর ভিত্তি করে কেউ কেউ হিরাক্লিটাস এর জন্মসময় খ্রীস্টপূর্ব ৫০৪-৫০১ অব্দ মনে করেনআবার, কারো কারো মতে হিরাক্লিটাস ৫৩৫ অব্দে জন্মগ্রহন করেনতার জন্ম এক সম্ভ্রান্ত বংশে। আদিপর্বের এই সমাজ-সচেতন দার্শনিক তার দর্শনে জগতের মূল এবং প্রাথমিক দ্রব্য (Substance) হিসেবে আগুনকে খুঁজে পান। তাঁর মতে, অগ্নিময় বস্তুবিশ্ব বিরোধ এবং সংঘর্ষের মধ্যে দিয়েই পরিবর্তিত হয়ে চলে। সৃষ্টি করে চলে বস্তুর অসংখ্য রূপ” তাই হয়তো সমসাময়িক দাসদের দুঃখ-কষ্টের আগুন তাকে স্পর্শ করেনি। তৎকালীন আইয়োনিয়ান দার্শনিক সম্প্রদায় রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। থেলিসের মৃত্যুর পর আয়োনিয়ার রাজনৈতিক সংঘাত অর্থাৎ অন্তর্দ্বন্দ্ব, বিভোক্ষ আর বিদ্রোহ তীব্র আকার নেয়। দাস আর প্রভু অর্থাৎ ভূ-স্বামীশ্রেণি ও পণ্য-বনিক শ্রেণির সংর্ঘষ প্রচণ্ড আকার ধারণ করে। হিরাক্লিটাস এই সব বিষয়ের নিরব এবং নিরপেক্ষ দর্শক ছিলেন না মোটেই। তিনি নিজ অভিজাত শ্রেণির পক্ষ নিয়ে সাধারণ মানুষ আর দাসদের বিপক্ষে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেন। তিনি বুঝেছিলেন অভিজাত শ্রেণিকে বাঁচতে বা বাঁচাতে হলে সাধারণ আর দাসদের মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য। নিজের শ্রেণি স্বার্থের বাইরে তিনি যেতে পারেন নি। তাঁর মতে ঐক্য সাময়িক ও আপেক্ষিক, কিন্তু সংঘর্ষ সর্বাত্মক। তাই সংঘৰ্ষই ন্যায়ধর্ম। সমাজের মূল সংঘর্ষ যে প্ৰভু ও দাসের ভিতরে এ উপলব্ধি তাঁর ছিল। যুদ্ধ সকলের প্রভু আর পিতা। যুদ্ধই দেবতা ও মানুষ সৃষ্টি করেছে। স্বাধীন মানুষ ও দাসদের সৃষ্টি করেছে”-, উক্তি হিরাক্লিটাসের।” প্রতিষ্ঠিত গ্রিক সমাজে খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে দাসের শোষণের ভিত্তিতে এই প্রাচীন দর্শনের বিকাশ ঘটে

আধুনিক বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের সকল কয়টি সূত্র প্রাচীন হিরাক্লিটাসের কাছ থেকে আশা করা যায় না। তিনি দ্বান্দ্বিক বস্তবাদের প্রাথমিক রূপকার, প্রাচীন মনীষীদের মধ্যে অব্যর্থ বস্তুসত্যের সার্থকতম নমস্যতম আবিস্কারক। আধুনিক যুগের বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের প্রথম প্রবক্তা ছিলেন নিগৃহীত নিপীড়িত মানবের মুক্তি সংগ্রামের মহান নেতা, আর প্রাচীন যুগের দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের প্রথম সূত্রকার ছিলেন লাঞ্ছিত জনতার শত্রুশিবিবের সদস্য ও সমর্থকএও বোধ হয় ইতিহাসের দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ার এক চমৎকার অভিব্যক্তি

আধুনিক সাম্যবাদ যাঁর ধারণা থেকে ধার করা তিনি প্লেটো- একথা অনেকেই বলেন। প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র বা ইউটোপিয়া-য় মানুষের শ্রেণি বিভাজনে তিন প্রকার মানুষের মাঝে, একপ্রকার মানুষকে দাস হিসেবে পাই। এই কাল্পনিক আদর্শ রাষ্ট্রে দাসদের কাজ অভিজাত শাসক শ্রেণি আর সামরিক শ্রেণির জন্য খাদ্যের যোগান অর্থাৎ উৎপাদন করা। তাঁর কাল্পনিক রাষ্ট্রের  দাসশ্রেণি অপরিহার্য অনুষঙ্গ হলেও দাসদের তিনি নাগরিকের মর্যাদা দেন নি। তাঁর সমসাময়িকে কোন কোন রাজ্য দাসদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার একতৃতীয়াংশ পর্যন্ত ছিল বলে জানা যায়। দূর্ভাগ্যক্রমে প্লেটো নিজেও একবার দাস জীবনের স্বাদ গ্রহণ করতে বাধ্য হন, রাজার কোপানলে পড়ে, পরে তার এক বন্ধুর প্রচেষ্টায় তিনি মুক্ত হন।  

প্লেটোর নিজ হাতে তৈরি শিষ্য অ্যারিস্টটল। প্লেটোর বিদ্যালয় ‘একাডেমি’তে তাঁর জীবনের কুড়ি বছর কেটেছে। তিনি গুরুর মতো আধ্যাত্মিক ভবিষ্যদ্বক্তা নন। অ্যারিস্টটলের দর্শন জ্ঞানকাণ্ড অভিজ্ঞতাবাদী। লাইসিয়াম নামের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর অ্যারিস্টটলের ৫০ বছর বয়সের অর্থাৎ পরিণত বয়সের রচনা ‘পলিটিকস্‌’গ্রিক ভাষায় এই বইটির নাম ‘পলিতিকা’ অর্থাৎ পলিস বা নগরের মানুষের জীবনের সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা। সমাজ, রাষ্ট্র, শাসনব্যবস্থা ও নৈতিকতা বিষয়ে এটি পৃথিবীর প্রথম একাডেমিক সন্দর্ভ। অথচ অ্যারিস্টটল তাঁর ‘পলিটিকস্‌’ রচনার প্রথম অধ্যায়েই দাসপ্রথার কফিনে সবচেয়ে বড় পেরেকটি ঠুকেছেন এই বইয়ের প্রথম বইয়ের ‘প্রভু ও দাসের সম্পর্ক- দাসত্বের সংজ্ঞা’ নামের তৃতীয় অধ্যায়ের তিনি যুক্তি দিয়ে দাসপ্রথাকে বৈধতা দিয়েছেন, আর পঞ্চম অধ্যায়ে প্রাকৃতিক দাসত্ব (Natural slavery) সূত্র দিয়ে দাসপ্রথাকে নৈতিকতা দান করেছেন। অ্যারিস্টটল মনে করেন, “বস্তুত কতগুলি সৃষ্টি জন্ম থেকেই এভাবে বিভক্ত : এদের এক অংশ শাসনের জন্য, অপর অংশ শাসিত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট। অ্যারিস্টটলের দাসপ্রথাকে নিয়ে চিন্তাভাবনার গভীরতা বোঝা যায়, যখন আমরা তাঁর মুখ থেকে শুনতে পাই, প্রভু এবং দাস উভয়ের জন্যই দাসপ্রথা কল্যাণকর। পরের অধ্যায়েই অর্থাৎ যষ্ঠ অধ্যায়ে অ্যারিস্টটল ‘দাস সংগ্রহের উপায়’ এবং সপ্তম অধ্যায়ে ‘দাসের উপর প্রভুর শাসন’ সম্পর্কেও আমাদের জ্ঞান দান করেছেন। আর তেরতম অধ্যায়ে তিনি ‘শাসক এবং শাসিত : দুইএর গুণ কি এক কিংবা ভিন্ন?’ অধ্যায়ে জানান, “আমরা নির্দিষ্ট করে বলেছি, দাসের কাজ হচ্ছে দৈহিক কার্য সাধন করা। এ কারণে তার প্রয়োজনীয় গুণের পরিমাণ অধিক হওয়ার কথা নয়।
 ... দাস প্রকৃতিগতভাবে দাস।...

অ্যারিস্টটলের সবচেয়ে বিখ্যাত ছাত্র আলেকজান্ডার তাঁর নির্মমতার শিক্ষা শিক্ষক অ্যারিস্টটলের কাছ থেকেই পেয়েছিলেন। ‘এথিক্স’ বা নৈতিকতা নামে কালজয়ী বইয়ের লেখক মানুষটি তাঁর ছাত্রকে পারস্য দখল করতে এবং সেখানকার মানুষকে বর্বর বলে দাস বানাতে অনুপ্রাণিত করেন। অ্যারিস্টটলের চোখে নন-গ্রিকরা বারবারিয়ান অর্থাৎ বর্বর

অ্যারিস্টটল নন-গ্রিকদের বলতেন বারবারিয়ান বা বর্বর এবং তাদের জীবনপদ্ধতিকে ঘৃণা করতেন। তাঁর ধারণা ছিল গ্রিকরা প্রকৃতিতে এসেছে উচ্চজাত হিসেবে, পারস্যের বর্বররা দাস হিসেবে।

গ্রিক সভ্যতা সম্পর্কে এত কথা বলার উদ্দেশ্য দুই-আড়াই বছর পরও জ্ঞান-বিজ্ঞানের নিয়ন্তা প্রাচীন গ্রিক সভ্যতা সম্পূর্ণ দাসব্যবস্থার উপর দণ্ডায়মান ছিল। তার প্রমাণ গ্রিক সভ্যদের মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠ সন্তানেরাই দাসপ্রথা উদযাপন এবং গুণকীর্তন করে গেছেন, প্রতিষ্ঠা এবং বৈধতার পক্ষে স্বাক্ষর রেখে গেছেন। নিম্নবর্গের মানুষের শ্রমের উপরই জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভিত্তি রচিত হয়েছিল। দাসরাও যে মানুষ প্রাচীন সেসব জ্ঞানী-বিজ্ঞানীরাও যেন ভাবতে পারতেন না। তাঁদের ব্যক্তি স্বার্থে বা গোষ্ঠী স্বার্থে একশ্রেণির মানুষকে প্রায় পশুর স্তরে নামিয়ে দিয়ে, নিজেদের সুখ-সুবিধা নিতে অন্তরাত্মা কাঁপেনি। তাঁরা জগতের ভাব-ভালোবাস, ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত সব দেখতে পেলেও, দাস করে রাখা মানুষদের কষ্ট-দুঃখ, লাঞ্ছনা-বঞ্চনা দেখতে পেতেন না।

মানুষদের মধ্য থেকে শুধু দরিদ্র, দুর্বল, ভিনদেশিদের দাস নাম দিয়ে একটি পশুসম শ্রেণি তৈরি করে তাদের সমাজ-সভ্যতার সরঞ্জাম ভেবে তাঁদের রক্ত চুষে সব সভ্যতাই সভ্যতার দীনতাকে ঢেকে রেখেছে। প্রাচীনদের দোষ দিয়েও লাভ কি, আমরা অর্বাচীনেরাও কি দাসমুক্ত সমাজে বসবাস করছি? পাঠককে এই ভাবনার খোরাক দিয়ে পরবর্তী আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

   সহায়ক

১)  UN Chronicle | Slavery in the Twenty-First CenturyHoward Dodson
২) The American Journal of Theology, Vol. 8, No. 3 (Jul., 1904), pp. 601-609,           Published by: The University of Chicago Press
৩) সমাজ সাহিত্য ও দর্শন, হেমন্ত কুমার গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৬০)
৪) এ্যারিস্টটল-এর পলিটিক্‌স – সরদার ফজলুল করিম
৫) এ্যারিস্টটল-এর পলিটিক্‌স – সরদার ফজলুল করিম

(জাপান থেকে প্রকাশিত শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক ৯ [লি] পত্রিকার
প্রথম/১৪২৬ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যায় প্রকাশিত)