ভাষা আন্দোলনের প্রথম নায়ক
আজ ১৯শে ফেব্রুয়ারি। একদিন পরই আমাদের স্বাদেশিকতা, স্বাধিকার, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতীক ‘শহীদ দিবস’। দেশ ইংরেজদের থেকে বুঝে পেয়ে পূর্ববাংলাবাসী আনন্দে আত্মহারা। স্বাধীনতা পাওয়ার ছয়মাসের মাথায় পাকিস্তানের করাচীতে পাকিস্তান গণপরিষদে প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। তারিখ ২৩শে ফেব্রুয়ারী ১৯৪৮ সাল। পরিষদে ক্ষমতায় মুসলিম লীগ, বিপক্ষে প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেস। প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনই কংগ্রেস দলীয় সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দু’টি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
প্রথম প্রস্তাবটি - “বছরে অন্তত একবার পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশন ঢাকায় অনুষ্ঠানের দাবী জানানো হয়”
আর
২য় প্রস্তাবটি - “that is sub-rule (1) 29, after word ‘English’ in line 2, the words ‘or Bengali’ be inserted.”
খুবই নিরীহ এবং অনাড়ম্ভর প্রস্তাব। প্রস্তাবটি কোন দলীয় সিদ্ধান্তও ছিল না। একান্তই স্ব-উদ্যোগে, স্বতঃপ্রণোদিতভাবে উত্থাপিত একটি প্রস্তাব। কিন্তু দুদিন পর ২৫শে ফেব্রুয়ারী এই সংশোধনী প্রস্তাবের স্বপক্ষে বক্তব্য উত্থাপিত হলে পাকিস্তান গণপরিষদে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে, প্রতিপক্ষের ক্ষুব্ধ বাক্যবাণে ভয়ংকর আক্রান্ত হন। কংগ্রেস দলীয় সদস্য ছাড়া বাকী সবাই আক্রমনে শরিক হন। যদিও সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সংশোধনী প্রস্তাবটি অগ্রাহ্য হয়ে যায়, তবে চার বছরের মাথায় সেই সংশোধনী প্রস্তাবের বাস্তবতা সারা জগদ্বাসী প্রত্যক্ষ করেন। বস্তুত এই ঘটনায়ই রোপিত হয়েছিল আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার বীজ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের ক্ষৌরকার রমণী শীলের কাছ থেকে জানা গেছে যে, ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে কুমিল্লার কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী অ্যাডভোকেট আবদুল করিমের তত্ত্বাবধানে ছোট ছেলে দিলীপকুমার দত্তসহ অশীতিপর বৃদ্ধ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাঁদেরকে ময়নামতি সেনানিবাসে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
মহান মানুষটি, যিনি প্রথম মাতৃভাষার পক্ষে আওয়াজ তুলে ছিলেন, তাঁর জন্য রইল বিনম্র শ্রদ্ধা আর আন্তরিক ভালবাসা।
সহায়কগ্রন্থ : একুশে প্রবন্ধ ২০০০, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত- মিনার মনসুর, পৃ: ১৮৪।